দাসীসমা ভাৰ্য্যা – মধুমিতা চক্রবর্তী

গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ও তাঁর ভাবাদর্শ এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল গণ-চেতনায়, তার প্রকাশ ঘটেছিল প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে, ব্যক্তিগত জীবনচর্চায় । পাশাপাশি বাণিজ্যের ক্রম-প্রসারণে ধনজীবী বণিক সম্প্রদায়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছিল সমাজে । এরই সঙ্গে শাস্ত্রচর্চার আদি অকৃত্রিম ঐতিহ্যের সঙ্গে মেধা, মুক্তচিন্তা ও উদার দৃষ্টির মেলবন্ধনে সমাজে কিছু নতুন মানুষ এসেছিলেন যাঁরা নতুন ভাবে ভাবতে ও ভাবাতে পারঙ্গম । নারীরাও ছিলেন এই তালিকায় । প্রচলিত রীতির অন্যায্য দিক নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলতেন । সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রয়োজনে প্রতিবাদ করতেন । সে রকমই এক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এই আলেখ্যে ।



সাকেতের শ্রেষ্ঠী ধনঞ্জয়, শ্রাবস্তীর শ্রেষ্ঠী সুদত্ত ও মৃগারের অন্তঃপুরের নারীদের মনোজগতের নানা প্রশ্ন ও প্রতিবাদের তীক্ষ্ণ বাদানুবাদ ও কাটাছেঁড়ার সাহসী প্রকাশ নিয়ে এই আখ্যান । সেখানে উপাসিকা বিশাখা স্বয়ং বুদ্ধদেবকে প্রশ্ন করতেও দ্বিধা করছেন না । আবার বুদ্ধের প্রদর্শিত পথ ধরেই সমাজে নারীর অবস্থানকে তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু বক্তব্য যথার্থভাবে প্রকাশ করতে কখনও কখনও অতীতের দিকে দৃষ্টি দিতে হয় । টি.এস এলিয়ট একেই বলেছেন Mythic Method । অতীতের পৃষ্ঠা থেকে সেই মিথকে খুঁজে বের করে আনতে হয় এবং এই মিথের মধ্যে থাকে নানা ডায়ামেনশন । এই আখ্যানে কিছু মৌলিক সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে যা আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক । তাই এই আখ্যান আজও মানবমনকে সংবেদিত করবে । একই সঙ্গে এ কথাও বলার যে এই লেখার বর্ণনায় রয়েছে মহাকাব্যিক গাম্ভীর্য । ভাষাই এর বাহক তৎসম শব্দ ও পালি ভাষার সুপ্রযুক্ত প্রয়োগ আখ্যানের সময়কালকে ধরতে সাহায্য করেছে । নারীর প্রতিবাদের মূল সুরটিও তাতে চিরন্তন রূপে বাঁধা পড়েছে