উনিশ শতকের বাংলার পুলিশ এবং কাঙাল হরিনাথ
Author : Asok Chattopadhyay - অশোক চট্টোপাধ্যায়
Publisher : Khori - খড়ি প্রকাশনী
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যাসলি ইডেন বাংলাদেশের পুলিশের কার্যকলাপের ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, যা পূর্বোক্ত সংবাদপত্রাদির রিপোর্টের ইংরেজি তর্জমার মাধ্যমে আহৃত, একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। সেই রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছিল যে, এদেশের জনসাধারণের ওপর পুলিশের অত্যাচার-নিপীড়নের ঘটনা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই পুলিশ জনসাধারণের ওপর বিপুল সংখ্যক অত্যাচারের ঘটনার সংঘটক। পুলিশের দ্বারা চিহ্নিত এবং প্রমাণিত ‘দোষী’ ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক মানুষই ছিলেন ‘প্রকৃত অর্থে নির্দোষ’।
Publisher | Khori - খড়ি প্রকাশনী |
Binding | Paperback |
Language | Bengali |
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যাসলি ইডেন বাংলাদেশের পুলিশের কার্যকলাপের ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, যা পূর্বোক্ত সংবাদপত্রাদির রিপোর্টের ইংরেজি তর্জমার মাধ্যমে আহৃত, একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। সেই রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছিল যে, এদেশের জনসাধারণের ওপর পুলিশের অত্যাচার-নিপীড়নের ঘটনা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই পুলিশ জনসাধারণের ওপর বিপুল সংখ্যক অত্যাচারের ঘটনার সংঘটক। পুলিশের দ্বারা চিহ্নিত এবং প্রমাণিত ‘দোষী’ ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক মানুষই ছিলেন ‘প্রকৃত অর্থে নির্দোষ’।
দারোগা-পুলিশের যুগলবন্দিতে এহেন অত্যাচার নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ‘গুপ্তযন্ত্রে’ মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছল হরিগোপাল মুখোপাধ্যায়ের প্রহসন নাটক ‘দারগা মশাই’। ভালুকনান থানার দারোগা কমলাকান্ত মুখোপাধ্যায় থানায় কেউ নালিশ করতে এলে যখনই অকুস্থলে যান তখনই তিনি বাধ্যতামূলকভাবে নজরানা আদায় করে থাকেন। সর্পাঘাতে মৃত সন্তানের শোকস্তব্ধ পিতার নিকট থেকে টাকা আদায় করতে এই দারোগা এবং তার সাগরেদরা দ্বিধান্বিত নয়। এমনকি জমাদারের নিকট থেকেও এই দারোগা টাকা আদায় করে। মালতিপুর গ্রামের প্রজা নরহরি দাসের ছেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, এখবর পেয়ে অকুস্থলে গিয়ে পঞ্চাশ টাকা পকেটস্থ করার পর লাশ দাহ করার অনুমতি দেয় দারোগা কমলাকান্ত। এই দারোগার বেশ কয়েকটি দুর্নীতিদুষ্ট ও জনবিরোধী ভূমিকার দৃষ্টান্ত রাখা হয়েছে এই প্রহসনে। এই দারোগার সদম্ভ উক্তি সমসময়ে দারোগা-পুলিশের মূল ভূমিকার অন্তর্বস্তুকে প্রকাশ করেছিল : ‘পুলিশে সত্যিও মিথ্যে হয় আর মিথ্যেও সত্যি হয়।’ রমনপুরে বিশ্বনাথ ঘোষের বাড়ি ডাকাতি হলে, তদন্তের নামে সেই গ্রামের অন্তত পনেরো জন নিরীহ প্রজার বাড়ি বাড়ি খানাতল্লাসি করে এই দারোগা কমলাকান্ত। সেখানে কিছু না পেয়ে তাদের থানায় চালান করার ভয় দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে দশ-কুড়ি টাকা করে আদায় করে। এই পনেরো জনের সম্মিলিত অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট অবশ্য শেষপর্যন্ত দারোগা কমলাকান্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং দুবছর কারাদণ্ড দেন। এইভাবে প্রহসনকার হরিগোপাল মুখোপাধ্যায় শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ রাজসরকারের বিচার ব্যবস্থার গুণকীর্তন করেছেন। এভাবে রাজসরকারের গুণকীর্তন করেছেন তৎকালীন ‘দারোগা’ গিরিশচন্দ্র বসুও। শুধুমাত্র রাজসরকার নয়, সাদা চামড়ার নীলকর সাহেবদেরও তিনি নির্বিচার নিন্দার পক্ষপাতী ছিলেন না।
Book Review
There are no reviews yet.