Publisher | Hawakal - হাওয়াকল |
Publication Year | 31/01/2019 |
ISBN | 978-93-87883-50-5 |
Pages | 128 |
Binding | Paperback |
Language | Bengali |
ভ্রমণ কাহিনি পড়ি কেন? বিশেষ করে সে কাহিনি আমাদের খুব ভালো লাগে যখন তা লেখা হয় একরকম অনাবিল বৈঠকী মেজাজে। মুজতবা আলি যে কারণে আমাদের এত প্রিয়। বসুধৈব কুটুম্বকম। এই ভুবনের সকলেই আমার আত্মীয়। কোথাও আমার জন্য দরজা বন্ধ নেই। যেখানেই যাই সকলেই দুই হাত বাড়িয়ে আছে জড়িয়ে নেবে বলে। এই যে আপন করে নেওয়া, এর কিন্তু দুটো দিক আছে। এক, যে নিচ্ছে তার কাছে। আর যাকে নিল, তার কাছেও। এই যে একে অপরকে কাছে টেনে নেওয়ার জগৎ, এই জগৎকে যে মানুষ স্বাদে গন্ধে বর্ণে নানা রূপে আস্বাদ করতে পারেন, সেই মানুষই কেবল পারবেন এমন স্বাদু ভ্রমণ কাহিনি রচনা করতে। “বিদিশার চোখ”-এর লেখক সঞ্জয় সাহা সে কাজটি অনায়াসে করে ফেলেছেন। বাংলা ভাষায় সুলিখিত ভ্রমণ কাহিনি খুব বেশি নেই। যদিও এই সময়ে ভ্রমণ বা ট্যুরিজম এক বিপুল ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। আর সে কারণেই ভ্রমণ সাহিত্যের এক রমরমা বাজারও তৈরি হয়েছে। তবে তাকে সাহিত্য বলাটা ঠিক হবে না। সেগুলো মূলত ট্র্যাভেল-গাইড। কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী কী দেখবেন, এসব বিবরণ সেখানে বেশি পাওয়া যায়। ভালো জাতের ভ্রমণ সাহিত্যে আমরা শুধু একটা জায়গার বিবরণ পাই না, তার সঙ্গে সেই জায়গার জল, হাওয়া, ঘর, বাড়ি, গাছপালা আর মানুষজনের সাথেও পরিচিত হই। “বিদিশার চোখ” সেই কারণেই সার্থক সৃষ্টি হয়ে ওঠে। লেখকের নিজের চোখ এখানে অসম্ভব অনিসন্ধিৎসু, মন মরমী, আর রসবোধ প্রবলভাবে ইন্দ্রিয়প্রবণ। এ–ভ্রমণকথার বহিরঙ্গে আছে লেখকের ভোপাল ভ্রমণ। আর সে যাত্রা শুরুই হয় একটি বিশেষ কারণে। লেখকের চিকিৎসার কারণে এই যাত্রা। গন্তব্য ভোপালের কোনো একটি ঝাঁ–চকচকে কর্পোরেট হাসপাতাল। অথচ, আমরা অবাক হই যখন দেখি, এতটা যন্ত্রণা সহ্য করেও লেখকের মন কী প্রবলভাবে সংবেদনশীল। রেলযাত্রার শুরু থেকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে অবধি যত দেখছেন, যা দেখছেন, যা কিছু তার অনুভবী মনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, সব কিছুকেই তিনি নিয়ে এসেছেন তাঁর লেখায়। একের পর এক চরিত্র উঠে এসেছে পাতায় পাতায়। তাদের কেউ কেউ সহযাত্রী, কেউ রেলের ভিখারী, আর কেউ–বা তাঁর পাশের বেডের রোগি। এই ভ্রমণ কাহিনির সবচেয়ে বড়ো গুণ এটাই যে এত অসংখ্য মানুষকে এ–লেখায় জায়গা দিয়েও তিনি প্রত্যেককে তাদের স্বকীয়তায় উজ্জ্বল করে তুলেছেন। এত অল্প পরিসরের এই রচনা, অথচ তাতেও প্রতিটি চরিত্র পাঠকের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখক কোথাও বিন্দুমাত্র জাজমেন্টাল নন। খুব ছোটো আকারে হলেও এ–লেখা যে আসলে আমাদের দেশের নানা রং, নানা রূপের সহাবস্থান আর স্বরূপকেই তুলে ধরতে চাইছে এ–কথা বুঝতে পাঠকের কোথাও অসুবিধে হয় না। আর এই সহজ প্রাণের কথা শুনতে শুনতে নিজেদের অগোচরেই আমরা কখন যেন বর্তমানকে ছুঁয়ে দিয়েই পৌঁছে যাই অতীতে, কবেকার বিদিশার দেশে। “বিদিশার চোখ” এই আবাক উন্মোচনের দিকে টেনে নিয়ে যায় আমাদের। এটাই এই বইয়ের সার্থকতা।
Book Review
There are no reviews yet.