দুই বাংলার পাইস হোটেল
Author : Edited by Samran huda
Publisher : Lyriqal Books - ৯ঋকাল
Publisher | Lyriqal Books - ৯ঋকাল |
ISBN | 978-93-87577-29-9 |
Pages | 264 |
Binding | Hardbound |
Language | Bengali |
শহর পত্তনের পরে টুটাফাটা ইংরেজি লব্জ সম্বল করে গাঁ ছেড়ে কোম্পানি বাহাদুরের কেরানি হল বাঙালি। মামা-কাকার হাত ধরে গুটিগুটি কালেজবাবুরাও সেখানে এসে ভিড়ল। মেসবাড়িতে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হল বটে, কিন্ত রোজ রাঁধাবাড়ার ঝক্কি পোহায় কে? এদিকে ট্যাঁকে রেস্ত বাড়ন্ত, তাই নেই রান্নার ঠাকুর পোষার মুরোদ। এমন বিপদে সহায় হয়ে উঠল মেসবাড়ির একতলা বা আপিসপাড়ার কোনা-খুঞ্চিতে গজিয়ে ওঠা ভাত ডাল মাছের আস্তানা। দুই বেলা পাই-পয়সামাত্র খরচে পেটচুক্তি ফেলে আসা হেঁশেলের জন্য হা-হুতাশেও স্বস্তির প্রলেপ দিল। কলকাতা হোক বা ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ, ব্রিটিশ আমলে এই ছিল পাইস হোটেলের গড়পড়তা জন্মবৃত্তান্ত সকল বন্দরেই।
শুধু মহানগর নয়, দুই বাংলার শহর মফস্সল বাজার বন্দরে এমন বেশ কিছু সাবেক ঠিকানা টিকে আছে বহাল তবিয়তে। তাদের কোনোটায় আজও মুরগির ডিম চৌকাঠ পেরোয় না, কোথাও আগমার্কা ঘানির তেল ছাড়া চলে না, আবার কোনও রসুইয়ে পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া পাঁঠা কষবার রীতি বহাল। হেথায় ছ্যাঁচড়া অমৃতসম, হোথায় চিংড়ির মালাইকারি তোফা, সেথায় ইলিশের বোলবোলাও দেখে পিলে চমকায়। পুরনোদের লেজুড় হয়ে হাল আমলের কর্পোরেটপাড়াতেও রাতারাতি মাথা তুলেছে দরমাঘেরা টিনের চালের ঝুপড়ি। সেখানে পিভিসি টেবিলে কাগুজে থালায় নিশ্চিন্ত অন্ন সংস্থানের মেকশিফট আয়োজনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে করণিকের তস্য দৌহিত্ররা। এভাবেই অস্তিত্বরক্ষার লড়াইয়ে যুগে যুগে টিকে থাকে পাইস হোটেল। তার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে অগুনতি চরিত্র, অজস্র গল্প, অযুত অবিস্মরণীয় মুহূর্তের শলমা-জরি আংরাখা।
কালে কালে সব শহরেই ভোল বদলাল। কাঁচা সড়ক পাকা হল, পালকি-ফিটনের বদলে ছুটল ঝাঁ চকচকে মোটরগাড়ি, গ্যাসবাতি নিভে গিয়ে এলইডির রোশনাই দিনকে রাত করল, বনেদিবাড়ির দালান ফাঁকা করে আকাশছোঁয়া ইমারতের কবুতরখোপে উড়ে গেল একান্নবর্তীর খড়কুটো। তবু গিয়েথুয়ে রয়ে গেল কিছুমিছু— হাতে টানা রিকশা, টিকিধারী ট্রাম, বাকরখানির দিস্তে, কালীঘাটের কুকুর আর গুটিকয় হাড় জিরজিরে ভাতের হোটেল। সেখানে কড়িবরগা থেকে দোল খেয়ে সেকেলে কেচ্ছা শোনায় ঘড়ঘড়ে ডিসি পাখা, নোনাধরা দেওয়ালের অচিন গ্রাফিতিতে ফুটে ওঠে কবেকার কূটকচালি, রংচটা ফ্রেমে আবছা হতে থাকে স্বদেশীয়ানা আর রান্নাঘরের ঝুলকালি মাখা ঘুলঘুলিতে ধরা থাকে রসনাতৃপ্তির যতেক রহস্য।
নবাব আমল থেকে হালের হোটল রহস্যের মুর্শিদাবাদকে ধরেছেন প্রকাশ দাস বিশ্বাস। বোলপুরের জওহরলাল-ইন্দিরা থেকে হালের হোটেলের বোলবোলাও বাৎলেছেন সুব্রত ঘোষ। সুগত পাইন তীর্থযাত্রার পথে সরাইখানার খোঁজ নিয়েছেন সাবেক মেদিনীপুর জেলার ইতিহাস খুঁজতে বসে। বন্দর শহর সিলেটের মশরাফিয়ার বৃতান্ত বলেছেন সুমনকুমার দাশ। চন্দনগরের এক পাইস হোটেল আবিষ্কারের কথা লিখেছেন শতদ্রু ঋক সেন, অনুরাধা কুন্ডা জানিয়েছেন মালদা জেলার পাইস হোটেলের গল্প। জলপাইগুড়ির তিস্তাপারের যাযাবর হোটেলের যাবতীয় মিথ নস্যাৎ করেছেন সব্যসাচী সেনগুপ্ত। মেলা পার্বণে মাঠে ঘাটে গজিয়ে ওঠা হোটেলের কথা সোমব্রত সরকারের কলমে। হাওড়ার কথা লিখেছেন প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত। মাওয়া ঘাটের ইলিশের গন্ধ ঢুকে পড়েছে পল্লব মোহাইমেনের লেখায়। কলকাতা ও আশপাশের পাইস হোটেলের বিবর্তন ধরা পড়েছে তিনটি লেখায়, সুরবেক বিশ্বাস, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, সুপ্রিয় মিত্রের কলমে ধরা রইল এ যাবত তুচ্ছ জ্ঞান করে আসা এক ইতিহাস। শতাব্দীর কাছাকাছি বা পেরিয়ে আসা পাঁচটি হোটেলের ক্লোজ আপ দেবদত্ত গুপ্ত, জয়দীপ বসু, স্বর্ণাভ বালা, হাসান উল রাকিব, অনল পাল ও মৌমিতা ভৌমিকের লেখায় যা দেবে নতুন করে সামাজিক ইতিহাস লেখার রসদ। এই ধরনের হোটেলকে কেন্দ্র করে ঘটে চলা ইতিহাসের টুকরো পাওয়া গেল সৈয়দ শামসুল হক, জয়ন্ত ঘোষাল ও তারাপদ রায়ের লেখায় তাও সংকলিত করা গেল এ যাত্রায়।
Book Review
There are no reviews yet.