দুঃখ পেয়ো না, শ্যামকাঞ্চন – শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়
Author : Saswata Bandopadhyay
Publisher : Manikarnika - মণিকর্ণিকা
Out of stock
Publisher | Manikarnika - মণিকর্ণিকা |
Language | Bengali |
ফুলের মতো সহজ সুরে
আশুবাবু বলেছিলেন, সকাল নয়, ভোরবেলা উঠতে হবে। ব্রাহ্মমুহূর্তে। শীত-গ্রীষ্ম ভেদ করলে চলবে না। উঠেই খালি পেটে ঢকঢক করে অনেকখানি জল। তারপর মুখ ধুয়ে আগের রাত্তিরের ভেজানো ছোলা-বাদাম-আদা কুচি। আর এক মিনিটও নষ্ট না করে আধো-অন্ধকারে বেরিয়ে পড়বে। মর্নিং ওয়াক। আর হ্যাঁ, সঙ্গে একটা লাঠি রাখবে―বেশি লম্বা নয়, এই ধরো হাত দুয়েক।
লাঠি কী হবে স্যার?
কুকুর তাড়াবে। একেকটা পাড়ার কুকুরগুলো ভারি বজ্জাত। দেখলেই তেড়ে আসে।
ভোরবেলাকে ব্রাহ্মমুহূর্ত কেন বলে?
সে-সময় ঈশ্বর স্ফুট হন। দিনের ওটাই সবচেয়ে পবিত্রক্ষণ কিনা। দেখবে, মিষ্টির দোকানে রস পাক করবার সময় কড়াইতে জল আর চিনি গুলে ফোটায়। হাতা দিয়ে যত নাড়ে তত ফেনা আর ময়লা উঠে আসে। তেমনই আমরা যত জাগি পৃথিবী ঘুলিয়ে ওঠে। পাপ বাড়ে। ঈশ্বরবোধ মিলিয়ে যায়। কিন্তু ভোরবেলা, ঠিক ভোর নয়, রাত্রি ও দিনের প্রথম সন্ধিমুহূর্তটিতে আলো জ্বেলে নিজের সৃষ্টিকে একবার দেখে নেন তিনি। ভালো করে কান পাতলে সে-সময় বাইরের চাইতে বেশি শব্দ টের পাবে নিজের ভেতরে―চিন্তাগুলো ছুটোছুটি করছে, কামনা-বাসনায় কী দারুণ ধাক্কাধাক্কি। দিনের বেলা বাইরের হট্টগোলে ওরা চাপা পড়ে যায়। আর তফাৎ করতে পারবে না। এখন যদি এই অস্থিরতায় রাশ টানতে চাও―ব্রাহ্মমুহূর্তই হল প্রকৃত সময়। শীত-গ্রীষ্ম―মর্নিং ওয়াক―মাস্ট।
কেন জানি না স্যারের কথা শুনতে ইচ্ছে করত। বাড়ির সবাই চাপা টেনে ঘুমোচ্ছে। ঘুমে ডুবে নরম লতার মতো শিথিল হয়ে আছে ওদের শরীর, বোনের মুখে এসে পড়েছে সন্তর্পণ উষালোক। এলার্ম বাজিয়ে উঠে, মুখে ছোলা-বাদাম-আদা কুচি ফেলে বেরিয়ে যেতাম মর্নিং ওয়াকে। যাওয়ার আগে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একবার দেখে নিতাম শিশিরভেজা তুলোফুলের মতো সুন্দর সুষুপ্ত পৃথিবীকে। নীরব এক বাঁশির মতো শুয়ে আছে আমাদের ইঁটপাতা গলি। ভাবি, এই পথ দিয়ে পার হয়ে যায় কত না গান, কত মানুষজন। হাতে ভিক্ষাপাত্র, কন্ঠে গান নিয়ে হাঁটে অন্ধ দিদি। পাশে কিশোর ভাই সুর তোলে সারিন্দায়―ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে…। একদিন হঠাৎই উদয় হয় ছোটো এক দল, কারো গলায় ঝোলানো হারমোনিয়াম, কারো গলায় ঢোল, কারো ঠোঁটে বাঁশি। মূল গায়ক দুজন, তাদের একজনের পায়ে ঘুঙুর। ঝমরঝমর ঘুঙুর বাজিয়ে সে ধুয়ো তোলে―শিব হে-এ-এ-এ…। শুধোলে জানায়―তারা গম্ভীরার দল, এসেছে সেই সুদূর মালদা থেকে, এদিকে কোথায় বায়না ছিল, ফেরবার আগে পথে পথে গান শুনিয়ে যাচ্ছে। পাড়া-পড়শি জড়ো হয়ে ওদের গান শুনি পুকুরপাড়ে। তবে এদের সবাই চাইতেও মনে পড়ে একজনকে, সেই একজন যার পরনে সাদা আলখাল্লা, মাথায় ধপধপে ফেট্টি, দুপুরবেলা অত্বর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে দোতারায় আঙুল ছুঁইয়ে সে গাইছিল―
তারে যে দেখেছে সেই মজেছে ছাই দিয়ে সংসারে,
ও সে না জানি কি কুহক জানে, না জানি কি কুহক জানে
অলক্ষে মন চুরি করে, কটাক্ষে মন চুরি করে।
Book Review
There are no reviews yet.