ফুডপ্যাথি ১ – সারা পৃথিবীর পথের খাবার ১
Author : Edited by Samran Huda Damu Mukhopadhyay
Publisher : Lyriqal Books - ৯ঋকাল
Publisher | Lyriqal Books - ৯ঋকাল |
ISBN | 978-93-87577-54-1 |
Pages | 256 |
Binding | Hardbound |
Language | Bengali |
মনীষীরা পইপই করে বলে গিয়েছেন, দেশ চিনতে হলে হন্টনই ভরসা। বাহনে চেপে একলপ্তে বেশ কিছু দ্রষ্টব্য বুড়ি-ছুঁয়ে যাওয়া যায় নিশ্চয়, কিন্তু তাতে অচিন মুলুকের রূপ-রস-গন্ধ কিছুই পরখ করা হয়ে ওঠে না। অদেখা জায়গার রহন-সহন সরেজমিনে ঠাহর করতে হলে উঁকি দেওয়া দরকার সেখানকার রসনাসংস্কৃতি এবং তারই জের টেনে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পথচলতি খাবার বা স্ট্রিট ফুড চর্চা। স্বাদ-সন্ধানীর প্রখর নজরে পথের ধারের গুমটি, ফুটপাথের অস্থায়ী হোটেল, ভুঁইফোড় ঢাবা আর পথেঘাটে টহল মারা ফেরিওয়ালার জিম্মায় থাকা সুখাদ্যরাজির গুহ্যকথা। বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরেই এক বা একাধিক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিবিধ সুখাদ্যের সমাবেশ ঘটে। কোথাও তার পরিচয় খাও গলি, কোথাও বা ফুড স্ট্রিট। চব্বিশ ঘণ্টা অথবা দিন-রাতের বিশেষ কোনও সময় জুড়ে সেখানে উদরপূরণের বিভিন্ন উপকরণ মজুত। খাদ্য সরণির এই সংস্কৃতি যে সভ্যতার আদিকাল থেকেই বহাল, তার অজস্র সাক্ষ্য-প্রমাণ ইতিহাসের জাবেদা খাতায় নথিভুক্ত হয়েছে যুগে যুগে। স্থান-কালের নিরিখে সেই সব খানা মজলিশের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পণ্ডিতেরা ছেনে নিয়েছেন মহামূল্যবান নৃতাত্ত্বিক মালমশলা। আর তারই ভিত্তিতে বিশ্লেষকের আতসকাচ খুঁজে পেয়েছে অধুনা বিলুপ্ত জনসমাজের চালচিত্র।
গৃহস্থের হেঁশেল ও সরাইখানার চৌকাঠ পার করে সটান রাস্তার ওপর কবে থেকে এই খাদ্যমেলার শুরুয়াৎ, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন, নিম্নবিত্ত নাগরিকের পেট ভরাতেই সড়কের ধারে বা ফেরিওয়ালার ডালায় ভর করে শস্তায় পেট ভরানোর এই ব্যবস্থা চালু হয়। এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সেরা নমুনা ফুটপাথের ওপর গজিয়ে ওঠা অসংখ্য ভাতের হোটেল। কারও মতে আবার কেজো মানুষের নিত্য খোরাকির জোগান দিতেই পথ খাবারের উদ্ভব। অফিসপাড়ার রকমারি খাবারের দোকানগুলি সেই তালিকায় পড়ে। কিন্তু এছাড়াও এমন বহু জনপ্রিয় খাবারদাবার রয়েছে, যা শুধুমাত্র রাস্তার ওপরেই বিক্রি হওয়া দস্তুর। এই ধরনের পদ সাধারণত চটজলদি তৈরি জলখাবার হিসেবেই পরিচিত, যা শত চেষ্টাতেও রেস্তোরাঁ অথবা বাড়ির রান্নাঘরে তৈরি করে ফেলা অসম্ভব। তাই ধুলোবালির বদনাম সত্ত্বেও পসার কমে না ফুচকা, আলুকাবলি, ঝালমুড়ি, ভেলপুরি বিক্রেতাদের। কস্মিনকালেও ঘষামাজা করা হয় না, এমন প্রবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে বিকোয় তেলেভাজা, কচুরি, ডালপুরি, শিঙাড়া ও জিলিপি। হাজার বদনাম রটলেও চাহিদা বেড়ে চলে স্ন্যাক্স বারের রোল-চাউ-কাবাব-পরোটার। আর স্বাস্থ্যান্বেষীদের চোখ রাঙানিকে থোড়াই কেয়ার করে পথেঘাটে খাইয়েদের পছন্দের লিস্টিতে পাকা জায়গা করে নেয় বুড়ির চুল থেকে মটকা কুলফি, শোনপাপড়ি থেকে কেক-প্যাটি, মনমোহিনী চপ থেকে সাড়ে বত্রিশ ভাজা।
তবে আড়ম্বরই শেষ কথা নয়। স্বাদ অন্বেষণকারী মাত্রই স্বীকার করবেন যে, বিশ্বের অযুত খাদ্য সরণি বেয়ে চলাচলের সময় সদ্য সেঁকে তোলা চেস্টনাটের সুঘ্রাণ যদি না ভাসত, ধবধবে সাদা প্লেটে সযত্নে লেবেরক্যাসে-সিম্মেলের হাতছানি যদি নজর এড়িয়ে যেত, সাউয়েরক্রাউতের কটাক্ষ যদি উপেক্ষা করতে হত অথবা ইরান-তুরান-ইস্তানবুলে পথের ধারে স্বর্গীয় স্বাদের অশেষ সম্পদ নিয়ে আবির্ভূত ফেরেস্তাদের অকৃপণ অবদান থেকে যদি এ ধরাধাম বঞ্চিত হত, তাহলে সভ্যতার বিকাশ তো কোন ছার, বেঁচে থাকার রোমাঞ্চ স্রেফ আভিধানিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেই ক্ষান্ত হত। দেশ-বিদেশে আর নিজের খাস তালুক দুই বাংলার এমনই হরেক পথচলতি জানা-অজানা সুখাদ্যের তত্ত্ব তালাশ করে জানা-অজানা বিচিত্র তথ্যে কবুলিয়তে ছয় খণ্ডের ফুডপ্যাথি।
Book Review
There are no reviews yet.