• Earn reward point, redeem on your next purchase JOIN US NOW

গড়গড়ার মা’লো- পূর্ণা চৌধুরী

Author : Purna Chowdhury
Publisher : Lyriqal Books - ৯ঋকাল
500.00
Share:

 
Publisher Lyriqal Books - ৯ঋকাল
ISBN 978-93-87577-02-2
Pages 168
Binding Hardbound
Language Bengali

উনবিংশ শতকের শেষ দিকে মেয়েদের স্কুল অবশ্য নেই নেই করেও ছিল না যে তা নয়। অবলাবান্ধবেরা পা রেখেছেন নবজাগৃতির চালচিত্রে। বিদ্যাসাগর মশাই সবে লিখে উঠেছেন বিধবাবিবাহ প্রবর্তন বিষয়ক প্রস্তাব। আর তাঁর নামে কুৎসায় কান পাতা যাচ্ছে না। মিসেস কুক ফিরে যাচ্ছেন ভগ্ন হৃদয়া। কুলকামিনীরা লিখছেন ‘মনোত্তমা’ হয়ে উঠবার কথা।
আর দাশু রায় বলছেন, বাল্য হতে বন্দীশালে মানুষকে পাঠশালে/ লিখতে দেয় না, কেন জান কান্তা/ যদি লেখাপড়া শিখতে লুকিয়ে লুকিয়ে পত্র লিখতে/ঘটত ভাল পীরিতের পন্থা। শিক্ষার দাসীবৃত্তি করলেও নাটক-নভেল পড়া পর্যন্ত টানা ছিল সীমানা। তবু যে দুচার ছত্র তাঁদের লেখা চিঠিচাপাটির গণ্ডি টপকে বাইরে আসছিল সেইসব আঁকিবুকি ল্যাখাজোখাকে ধর্তব্যে না আনাই ছিল দস্তুর। বেথুন ইস্কুলের গাড়ির গায়ে বিদ্যেসাগরমশায় বড় বড় হরফে লিখে দিয়েছিলেন ‘কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীরাতিযত্নত’। এই সব সেই সেকালের কথা, যখন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের ডাকে সাড়া দিয়ে উত্তর ও পূর্ববঙ্গের বন্যা, ঝড়ের জন্যে চাঁদা সংগ্রহ করতে বেরিয়ে এলেন সোনাগাছি, রামবাগান চাঁপাতলা, আহিরীটোলা জোড়াসাঁকো, সিমলা, কেরানিবাগান, ফুলবাগানের পতিতারা, তাঁদের পরণে লাল পাড় গেরুয়া শাড়ি, কপালে লাল টিপ’। বটতলার বইতে তখন প্রোটাগনিস্ট স্ত্রী চরিত্রেরা রবিঠাকুরের গান গাইতে শিখছে কেবল। কলকাতার নাট্যমঞ্চ তখন কাঁপাচ্ছেন দুই বিবি, মিস গ্রেগ আর মিস এলিস।

ইতিহাস আসলে ব্যাটাছেলেদের লেখা ব্যাটাছেলেদের জয়জয়াকারের গল্প। সেই গল্প শোনানোর জন্যে উৎসাহী বা জ্ঞানীগুণীর সংখ্যার কমতি নেই। কিন্তু ঘোমটার আড়ালে বা ঘোমটা খসিয়েছে যে মেয়েমানুষেরা তাঁদের নিজেদের কথা বলতে চেয়েছেন, তাদের বোধভাষ্য নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা আজও নেই। ১৮০০ থেকে ১৯০০-র নানাবিধ নাগরিক ‘জঞ্জাল ঘেঁটে’ উনিশ শতকীয় কলকাতার বৃত্তান্ত সরেজমিন ফিরে দেখলেন পূর্ণা চৌধুরী। ‘গড়গড়ার মা’লো’  দুইটি ধারার  বুনোটে ‘অন্য’ ইতিহাস। অন্য ভাষায়, অন্য মেজাজে বলা। সে কথা অকপটে স্বীকার করে লেখক বলছেন—সত্য বই মিথ্যা বলিব না। অনেকদিন ধরেই ভেবেছি মেয়েদের দেবী অথবা দানবী সাজানোর যে খেলা সেই মধ্য যুগ থেকেই চলে এসেছে সাহিত্য এবং ইতিহাসে, তার বাইরে একটা ব্যতিক্রমী সন্ধান শুরু হওয়া দরকার। বলাটা সহজ। কার্যকালে সমুৎপন্নে  সে বড় জটিল ব্যাপার।  সেই যে শরৎবাবুর শ্রীকান্ত বলেছিল ‘লাও তো বটে, কিন্তু আনে কে’, সেই বৃত্তান্ত। লাজ -লজ্জা ভয় জয় করতে খানিক সময় গেল, তার পর  বসে পড়লাম। দেখলাম রসদ খুব কম নয়, দুই এক কথা শুরু করতে যথেষ্টর একটু বেশি। লিখতে লিখতে শিখেছি, পড়তে পড়তে লিখেছি, এইভাবেই কাজ এগিয়েছে।  যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে বসেন এ লেখা নারীবাদী সমীক্ষা  কিনা,  আমি বলব ‘না’, এ হল একটা ভিন্ন বাচনের খোঁজ, পুরুষমুখী ইতিহাস গ্রন্থনার ছকের বাইরে এক প্রতিবাদী সমান্তরাল কথন। এ বইয়ে আছেন দেবী এবং দাসীরা। আছেন কিছু পুরুষও। পুরুষরা মাথায় থাকুন, আমি অধম মেয়েমানুষ, দেবী আর দাসীদের সঙ্গে গলা মেলালাম, তাদেরই ভাষা, তাদেরই ভঙ্গি রপ্ত করে। মেয়েদের ‘বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না’ এ প্রবচনটি যে একটি পাখি পড়ানো মিথ্যে,  তা প্রমাণিত হোক। গড়গড়ার মা ’লো ঊনবিংশ থেকে বিংশ শতকের নারীবাদী ইতিহাস, না মেয়েমানুষদের কথা, সেটা পাঠকরা স্থির করুন। সে বিচার তাঁদের। আমি শুধু বলি, ‘আমার রাধা শক্তি সঞ্চারিল নইলে পারব কেন?’।

Book Review

Be the first to review “গড়গড়ার মা’লো- পূর্ণা চৌধুরী”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

There are no reviews yet.