গোয়েন্দা রহস্যের সন্ধানে
Author : Proloy Basu - প্রলয় বসু
Publisher : Khori - খড়ি প্রকাশনী
Publisher | Khori - খড়ি প্রকাশনী |
Binding | Paperback |
Language | Bengali |
পুলিশ নামটা নতুনই, তবু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন নামে এই ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। তার পরিচয় পর্ব বরং আগে সেরে ফেলি।
পুলিশ হচ্ছে এমন একটা বাহিনী যারা রাষ্ট্রের সাংবিধানের অংশ বা বলা ভালো রাষ্ট্র শক্তির যন্ত্রাংশ। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াটাই এদের মূল কাজ। আইনশৃঙ্খলা তো আর এমনি এমনি রক্ষা হয় না, রক্ষা করতে গেলে যা করতে হয়, তার ফল স্বরূপ অপরাধ নিয়ন্ত্রনে থাকে। তাদের হাতে ‘আইনসম্মত ভাবে’ গ্রেফতার করার ক্ষমতাও আছে। মূল ধাঁচ এক হলেও তাদের সীমানা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। তাদের কর্মকান্ড গুলো আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক থাকে।
আচ্ছা সব সময় নিন্দে মন্দ করছি, কিন্তু পুলিশ ছাড়া চলবে? না, পুলিশ ছাড়া চলতে পারে না। ইতিহাসের পাতায়, তাই, কোন না কোন রূপে পুলিশ সংগঠনের অস্তিত্ব মিলবেই। ‘রাষ্ট্র’ এই ধারণার যখন সৃষ্টি হয়নি, তখন থেকেই মানুষ সুসংবদ্ধ হয়ে, এক জায়গায় বসবাস করা শুরু করে। আর প্রতিটি গোষ্ঠী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে, ‘আদি পুলিশি’ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যদিও সে সময় কোন আইনের অস্তিত্ব ছিল না। ভুল বললাম, আইন ছিল। কিন্তু ছিল না কোন লিখিত আইন। আইন লেখা হবার সাথে সাথেই এই আইন কে ব্যবহার করার জন্য সুসংবদ্ধ পুলিশ সংস্থারও প্রয়োজন দেখা দেয়।
তাহলে প্রথম আইন কবে লেখা হয়?
খ্রীস্টপূর্ব ২০৫০ অব্দে সুমেরীয় শাসক উর-নামু (কেউ কেউ বলেন, সম্রাট হাম্মুরাবী) সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রথম প্রচলিত আইনের একটা সংকলন প্রকাশ করেন, যা বিখ্যাত ‘হাম্মুরাবীর কোড’ নামে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে ‘হাম্মুরাবীর কোড’ কে ঠিক ভাবে ব্যবহার করার জন্যই পৃথিবীতে প্রথম পুলিশ সংগঠনের ‘সৃষ্টি’ হয়।
নীল নদ আর তার সীমানা বরাবর এলাকায় চোরাচালান আটকাতে মিশরের শাসক আমেনহোটেপ খ্রীস্টপূর্ব ১৪০০ তে নৌকার টহল দেবার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর এটা ছিল পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রথম শুল্ক পুলিশ। অবশ্য এরপরে নীল নদে নিয়মিত নজরদারি চালাবার উদ্দেশ্যে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ নৌপুলিশের প্রতিষ্ঠা করা হয়। এইরকম ভাবেই গ্রীসের ইতিহাসে রাজা পেরিক্লিসের আমলে পুলিশ বাহিনীর গঠন করা হয়। এই পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন ১১ জন কমিশনার।
প্রাচীন চৈনিক সভ্যতায় ‘পার্ফেক্টস’ নামের একটা বাহিনী ছিল। যাদের কাজ ছিল শাসকের নিরাপত্তা আর সাম্রাজ্যের ভিতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এই ‘পার্ফেক্টস’এর মধ্যেও নানা রকম দায়িত্ব দেওয়া ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে এই যে, ‘পার্ফেক্টস’ দের মধ্যে নারীও ছিল।
প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাসদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল একটি বাহিনী যাদের কাজও ছিল পুলিশিং। এদের বলা হত ‘রড বেয়ারার’ বা লাঠি বহনকারী। এদেরও কাজ ছিল শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
রোমান শাসকদের মধ্যে অগাস্টাস সিজারের আমলে, পুলিসের অনেক ভাগ দেখতে পেলাম। সম্রাটের সুরক্ষার জন্য ‘প্রিটোরিয়ান গার্ড’, শহরের ফৌজদারি অপরাধ আটকাতে ‘আর্বান কোহর্ট’ আর আগুন নেভাবার আর রাতের পাহারার জন্য ‘ভিজিলি’ নামে তিন রকমের আলাদা পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি করা হয়েছিল।
মধ্যযুগেও নানা নামে ও নানা রূপে পুলিশি ব্যবস্থা দেখা যায়। স্পেনে এদেরকে বলা হত ‘হলি ব্রাদারহুডস’। এরা ছিল সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী। ফ্রান্সেও ছিল পুলিশি ব্যবস্থা। এদেরকে ‘মার্শাল’ বলা হত। নরম্যান সাম্রাজ্যের পুলিশকে বলা হত ‘সেরিফ’।
ইংল্যান্ডে প্রাচীন যুগে ছিল ‘টাইথিং’ প্রথা। দশটি পরিবারের সুরক্ষার জন্য গঠন করা হত একটি টাইথিং। দশটি টাইথিং মিলে হত শতক যার দায়িত্বে থাকতেন রীভ নামের এক কর্মকর্তা। একশটি শতকের সমন্বয়ে গঠিত হত শায়ার। শায়ারের দায়িত্বে থাকতেন একজন শায়ার-রীভ। পরবর্তীতে বৃটেনে মধ্যযুগে পুলিশিং নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
প্যারিসে ১৬৬৭ সালে কিং লুইস এর সরকার সুসংগঠিত প্রথম পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলে। আর এর মাধ্যমেই আধুনিক যুগের শুরুতে পুলিশের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর ইতিহাস পরিবর্তনের ধারায় এলো ফরাসি বিপ্লব। নেপোলিয়ান ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৮০০ সালে প্যারিসের পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় গঠন করেন।
অবশেষে ১৮২৯ সালে স্যার রবার্ট পীলের হাতে গঠিত হয় আধুনিক মেট্রোপলিটন পুলিশ।
১৮২৯ সালের ১২ই মার্চ প্রথম পোষাকধারী পুলিশের আবির্ভাব ঘটে যাদেরকে বলা হত ‘সিটি সার্জেন্ট’। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে পুলিশের যাত্রা শুরু হলো। আবির্ভাব হলো আধুনিক পুলিশের।
Book Review
There are no reviews yet.