কানন কুমারী সেই বাউল চাতালখানি মনে করো
Publisher : Lyriqal Books - ৯ঋকাল
গালিবের যেমন দিল্লি, মান্টোর যেমন বোম্বাই, এঁর তেমনই বারাসাত। জন্ম উনিশশো ছিয়াশিতে। এই মফস্সলের প্রেমে পড়ে যাওয়া হয়নি অন্য কোথাও। একনিষ্ঠ ভালবেসেছেন গলির মোড়ের টাইমকলকে, জ্যোৎস্না মিউজিক হাউজকে, বন্দোপাধ্যায়দের আমবাগানকে আর কলপাড়ে খাম্বায় বসে ঝিমোনো বাবার সাদা বেড়ালনীকে।
মেঘেদের চিঠি লিখে ক্লান্ত সারাদিন মার্গারিটা সমস্ত প্রবাস। আমাদেরও নেশা ঘটে এই সব সামান্য স্মৃতির আমাদেরও বিষাদ-গাথা স্তব্ধ হয়ে আসে।
Publisher | Lyriqal Books - ৯ঋকাল |
Binding | Paperback |
Language | Bengali |
সুপুরির সারি, ঝোপের ভিতর থেকে তুবড়ির মতো ছিটকে ওঠা ডাহুকের ডাক। আমকাঁঠালের গাছে নীলমাথা হরিয়ালের দল, বড় মোরগের প্রহরনামা। রাস্তার দুপাশে এখানে এখনও কাকমাছি আর হুড়হুড়ের ঝোপ। আদিবাসী উঠোনের পেলবতা, সুহাসিনী কেজরিওয়ালের কাজের সুষমা। এক ঠ্যাঙের ধ্যানী বক, স্বপ্নবিভোর। গত কয়েকবছরে একে একে মারা যায় যশোর রোডের সব বড় গাছ। পাড়ার সব পুকুর বুজিয়ে ফ্ল্যাট ওঠে। সব খেলার মাঠে বাড়ি। আজকাল সারা বছর বর্ষাকাল, নর্দমা উপছে পড়ে, কিন্তু সেখানে আর সোনাখড়কি মাছ কিংবা ব্যাঙাচিরা নেই। পাখিরা কোথায় আছে? শেয়াল, ভাম, হনুমানের দল? যশোর রোডের উপর একটা নীল সাইনবোর্ড অশ্লীল ইয়ার্কির মতো দাঁড়িয়ে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে যশোর রোডের সব জ্যান্ত গাছ অবধ্য। আসলে সেটাই মৃত্যু পরোয়ানা। মেরে ফেললেই অ্যাসফল্ট বাঁধানো রাস্তা হবে। জ্যান্ত গাছ বা মানুষ দুটোই মেরে ফেলা খুব কি কঠিন? সংস্কারে আটকায়? আমরা কোনও কিছুরই প্রতিবাদ করি না। পুকুর বোজানো, গাছ কাটা। টাইমকলের মুখ চুরি যায়, ধুলো ঢাকে জ্যোৎস্না মিউজিক হাউসকে। সকলই নষ্ট হয়।
এই তো, আর কিছু তো নয়। প্রজ্ঞাদীপা চেয়েছিল কেবল এইসব মরে যাওয়াগুলো মেনে নিয়ে বেঁচে থাকতে। দেখতে অশত্থ গাছের পাতা ঝরে যাচ্ছে, একদিন আবার প্রবল জয়োৎসবে ফিরে আসবে। মা বেজি দুটি ছানা নিয়ে রাস্তা পেরোয় আজও। আজকাল কিছুই চেনা লাগে না। রাস্তা, পাখির ডাক, ফুলের গন্ধ। সব অচেনা। একদিন গাছ পাখি কেউই ফিরবে না আর জেনে শান্তি লাগে তাঁর। শাস্তি লাগে মৃত নগরীর কথা ভেবে।
Book Review
There are no reviews yet.