রসুইবাগান- জায়েদ ফরিদ
Author : Jayed Farid
Publisher : Lyriqal Books - ৯ঋকাল
মানব সভ্যতায় বৃক্ষ বিষয়ে লেখালিখি হয়েছে প্রভূত। রামায়ণ, মহাভারত, জাতক ও পুঁথিসাহিত্যে বৃক্ষের বন্দনাগান গাওয়া হয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও গাছপালাতরুলতার সপ্রাণ উপস্থিতি লক্ষণীয়। বিজ্ঞানভিত্তিক রচনাও হয়েছে বেশ কিছু। সেই প্রচলিত ধারা থেকে খানিক সরে এসে আমরা চাই মানুষের চোখ দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য উদ্ভিদজগতকে দেখতে। রসুইবাগান নৃতত্ত্ববিদ্যার সঙ্গে উদ্ভিদবিদ্যার সহযাত্রা, আশা করা যায় অন্যধারার পাঠাভ্যাসের দিগন্ত খুলে দেবে।
Publisher | Lyriqal Books - ৯ঋকাল |
ISBN | 978-93-87577-38-1 |
Pages | 200 |
Binding | Hardbound |
Language | Bengali |
জীবনের রান্নঘরের দাওয়ায় বসে দেখা সামান্য দু’দণ্ড গাছ পালা আর বাঞ্ছালতার সমাহার রসুইবাগান। সে বাগানে আছে বিবিধ বিষ ও ওষুধ হিসেবে স্মরণাতীত কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসা উদ্ভিদদের। মানবসভ্যতার প্রায় সূচনাকাল থেকে যার পরিমিত ব্যবহার নিরাময় যুগিয়ে এসেছে। ব্যবহৃত হয়েছে পাকশালায়। ইরোকুয়া, মিকম্যাক নেটিভ ইন্ডিয়ানরা প্রায় তিনশো বছর আগে থেকে বানায় ম্যাপল সিরাপ। প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো মেক্সিকোর এক গুহা থেকে মিলেছে অনন্তলতার বীজের খই। যা আসলে আদিম মানুষের পপকর্ন। প্যালেস্টাইনে ফণিমনসার লাল আর মেরুন ফলের কদর খুব জেলি তৈরির জন্যে। এমন কী সচরাচর জানে কেউ, যে সর্বজয়ার কন্দ থেকে ভিয়েতনামে তৈরি হয় স্বচ্ছ সেলোফেন নুডুলস।
তক্ষশীলার ভিষগাচার্য্য আত্রেয় পুনর্বসু তাঁর ছাত্র জীবককে বলেন অরণ্য থেকে এমন একটি গাছ খুঁজে আনতে যার কোনও ঔষধিগুণ নেই, যা মানবকল্যাণে লাগে না। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত জীবক ঘুরে বেড়ালেন প্রাচীন সেই অরণ্যে, প্রতিটি বৃক্ষ-তৃণ-গুল্ম পরীক্ষা করে দেখলেন। তার পর ঝিকিমিকি বেলায় ফিরলেন গুরুর সকাশে, বললেন ‘হে আচার্য্য, আজ সারাদিন এই বনে ঘুরে ফিরে আমি এমন একটিও তৃণগুল্মলতাবৃক্ষ পাইনি যার কোনও ঔষধিগুণ নেই, যার কোনও ব্যবহার মানবকল্যাণে নেই।’ তবু মানুষ নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর, প্রাণী জগতে কেহই তাহার আপনার নহে। তবু গাছেরা ঘিরে রয়েছে যে সদাই টের পাই নিয়ত, শ্বাসে-প্রশ্বাসে। দৈনন্দিনের আহার্য থেকে ব্যবহার্য, অন্ন-বস্ত্র-বই থেকে বাসস্থান, মানুষের সমস্ত বাসনাগুলি বৃক্ষপানেই ধায়। মানুষ আঁকতে চায় সেই গাছ, যা সপ্তনাড়িপাকে জড়িয়ে রেখেছে এই জীবজগত, মানবসভ্যতা। সে স্বপ্ন দেখে হাত পেতে গাছের তলায় দাঁড়ালে ঝরে পড়ে নতুন বস্ত্র, সোনারুপা, মধুশাল ধান, বিবিধ তৈজস। উদ্ভিদ বিমুখ করে না কখনও। বাঞ্ছাপূরণকারী এই বৃক্ষকে ভালবেসে বাসনাবৃক্ষ বলে ডাকে। মানুষ ও গাছের অনন্ত সম্পর্কগাথা। সমস্ত বাসনার সমাহার কোনও অবাস্তব আশালতার জন্ম দিতে পারে কেবল, রাঙিয়ে তুলতে পারে অকর্ষিত মনোভূমি। তবুও মানুষ অবিচল উদাসীন, মানুষের ক্রোধ ও লিপ্সা পরশুরামের মতো সংহার করে গাছ। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করতে সাড়ে চারহাজার গাছের মৃত্যুদণ্ড হয়ে যায়। আমরা হাইরাইজ বিল্ডিং বানাই পারস্পারিক নির্ভরতার প্রাগৈতিহাসিক সন্দর্ভ ভুলে গিয়ে। গাছের ভোট নেই, টিআরপি নেই কোনও। নির্বিচারে গাছ কাটা চলে। এগিয়ে আসে আর্থস’ ওভারশুট ডে।
মানব সভ্যতায় বৃক্ষ বিষয়ে লেখালিখি হয়েছে প্রভূত। রামায়ণ, মহাভারত, জাতক ও পুঁথিসাহিত্যে বৃক্ষের বন্দনাগান গাওয়া হয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও গাছপালাতরুলতার সপ্রাণ উপস্থিতি লক্ষণীয়। বিজ্ঞানভিত্তিক রচনাও হয়েছে বেশ কিছু। সেই প্রচলিত ধারা থেকে খানিক সরে এসে আমরা চাই মানুষের চোখ দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য উদ্ভিদজগতকে দেখতে। রসুইবাগান নৃতত্ত্ববিদ্যার সঙ্গে উদ্ভিদবিদ্যার সহযাত্রা, আশা করা যায় অন্যধারার পাঠাভ্যাসের দিগন্ত খুলে দেবে।
Book Review
There are no reviews yet.